তাসকিন আহমেদের নেতৃত্বে বিপিএলের অগোছালো রাজশাহী: সমস্যা সত্ত্বেও জয়ের আনন্দ

দুর্বার রাজশাহী দলে খেলছেন তাসকিন আহমেদ। ম্যাচের দিনই হোটেল পরিবর্তন, বিদেশি খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি—এইসব বিশৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে দিন কাটানোর পরও তাসকিন নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। হাসতে হাসতেই তিনি বলেন, “আমার জীবনে নতুন এক অভিজ্ঞতা হলো। ম্যাচের দিন হোটেল বদল করতে হলো। মাঠে আসার দুই ঘণ্টা আগে শুনলাম, বিদেশি ক্রিকেটাররা আসবেন না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এটা কল্পনাও করা যায় না।”
ম্যাচের দিন সকালের ঘটনা তুলে ধরে তাসকিন জানান, নতুন হোটেলে গিয়ে মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখনই খবর আসে বিদেশি খেলোয়াড়রা পারিশ্রমিক না পাওয়ায় মাঠে নামবেন না। দলের স্থানীয় ক্রিকেটারদের বোঝানোর চেষ্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে বোর্ড থেকে ফোনে আশ্বস্ত করার পর স্থানীয় ১১ জন ক্রিকেটার নিয়ে মাঠে নামতে হয়।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যেও রাজশাহী দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে টেবিল টপার রংপুর রাইডার্সকে ২ রানে হারিয়েছে। জয়ের পর তাসকিন বলেন, “সত্যি বলতে, দিনের শুরু থেকেই নাটক দেখেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টিম এফোর্ট আর সবার প্রচেষ্টার কারণে আল্লাহর রহমতে জয় পেয়েছি। শুরুর দিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম, কিন্তু পরে সব ঠিক হয়ে যায়। সবাই চেষ্টা করেছে, সেটার ফল পেয়েছি।”
সমস্যায় ভরা দল
বিপিএল এমনিতেই সমালোচনায় ভরা, কিন্তু নবাগত দল দুর্বার রাজশাহীর ক্ষেত্রে তা আরও বেশি। পেশাদারিত্বের অভাব, আর্থিক জটিলতা, খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা এবং পরিবেশ নিয়ে একাধিক সমস্যা চলছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তাসকিন জানান, “খেলাটা এখন নিজেদের জন্যই খেলতে হচ্ছে। এটা আমাদের রুটি-রুজি। তাই যত সমস্যাই হোক, চেষ্টা করছি মাঠে নিজেদের প্রমাণ করতে।”
তাসকিন আরও বলেন, “বিপিএল আমাদের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট। প্রত্যাশা থাকে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে খেলা হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দলে নানা সমস্যা হয়েছে। তবুও সবার মনে একটাই কথা ছিল—নিজেদের প্রমাণ করার মঞ্চ এটা। তাই সমস্যা ভুলে খেলাটা উপভোগ করতে হবে।”
জয়ের পেছনে মনোবল আর দলগত প্রচেষ্টা
তাসকিন বলেন, “স্থানীয় খেলোয়াড়রা তেমন বড় নাম না। তবে আমরা সবাই একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছি—’লেটস ট্রাই’। সবাই ইতিবাচক ছিল। সাহস করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যার যখন প্রয়োজন, সে বোলিং-ফিল্ডিং করেছে। সবাই জানত হারানোর কিছু নেই। আমাদের চেষ্টার ফলেই জয় এসেছে।”
তাসকিন মনে করেন, চাপের মধ্যে এমন খেলা ভবিষ্যতে তাদের আরও শক্তিশালী করে তুলবে। তিনি বলেন, “এত সমস্যার মধ্যে খেলাটা আমাদের জন্য একটা বড় অভিজ্ঞতা। এই চাপের মধ্য দিয়ে গেলে ভবিষ্যতে বড় মঞ্চে খেলাটা সহজ হয়ে যাবে।”
তাসকিনের মুখে হাসি লুকিয়ে রাখে কষ্ট। জয় সেই কষ্টে খানিকটা পরশ বুলালেও, দাগটা থেকে যায়। বিপিএলের অগোছালো পরিবেশ আর ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের পেশাদারিত্বের অভাব তাসকিনের মতো খেলোয়াড়দের জন্য বড় ধাক্কা। তবু তিনি হাসেন, কারণ ক্রিকেটই তার জীবনের ভালোবাসা এবং রুটি-রুজি।