শীতকালে খেজুরের রস পান নিয়ে সতর্কতা: নিপাহ ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়

ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, প্রফেসর ইমেরিটাস, বিএসএমএমইউ
শীতকালে গ্রামাঞ্চলে খেজুরের রস খাওয়ার প্রচলন থাকে প্রচুর। পিঠাপুলি তৈরিতে খেজুরের রসসহ তালের রসের ব্যবহারও চোখে পড়ে। তবে এসব রস কাঁচা খেলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রফেসর ইমেরিটাস ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছেন।
রস দূষণের কারণ
খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য গাছে বাঁধা হাঁড়িতে বাদুড় বা অন্যান্য প্রাণী মুখ দিলে তাদের লালার মাধ্যমে রস দূষিত হতে পারে। এ রস কাঁচা অবস্থায় পান করলে নিপাহ ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে।
নিপাহ ভাইরাস: একটি ভয়াবহ সংক্রমণ
নিপাহ ভাইরাস জুনোটিক ভাইরাস, যা প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। এটি সাধারণত জ্বর, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। মস্তিষ্কের প্রদাহে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগ।
উপসর্গ কী কী?
নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণের প্রাথমিক উপসর্গগুলো হলো:
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- পেশির ব্যথা
- গলাব্যথা
- বমি
সংক্রমণ গুরুতর হলে রোগী অচেতন হয়ে পড়তে পারে এবং খিঁচুনি দেখা দিতে পারে।
কীভাবে নিরাপদে রস খাবেন?
১. কখনো কাঁচা খেজুরের রস পান করবেন না। রস স্ফুটনাংকের ওপর ভালোভাবে জ্বাল দিলে ভাইরাস মরে যায়।
২. খেজুরের গুড় নিরাপদ, কারণ তাতে ভাইরাস সক্রিয় থাকে না।
৩. রস সংগ্রহের হাঁড়ি ঢেকে রাখা উচিত ধইঞ্চা, পাট বা পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে। তবে খাওয়ার আগে রস জ্বাল দিয়ে নেওয়া ভালো।
৪. আধখাওয়া বা দাগযুক্ত ফল এড়িয়ে চলুন এবং ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
রোগ প্রতিরোধে সেবাদানকারীর ভূমিকা
১. নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত এলাকায় কোনো রোগীর জ্বরের পর অচেতনতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
২. সেবাদানকারীদের মুখে মাস্ক পরা, রোগীর সংস্পর্শের পর হাত ধোয়া এবং ভিড় এড়িয়ে চলা জরুরি।
টিকা বা ওষুধ নেই, সচেতনতাই রক্ষাকবচ
এ ভাইরাসের এখনো কোনো কার্যকর টিকা বা নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। তাই জনসচেতনতার মাধ্যমেই এ ভাইরাস প্রতিরোধ করা সম্ভব। গ্রামাঞ্চলে খেজুরের রস খাওয়ার প্রচলন বেশি হওয়ায় এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করা প্রয়োজন।
সতর্ক থাকুন, সুস্থ থাকুন।