শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন | ২১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |১০ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম:
প্রশাসন ও পুলিশের সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে নয়- এনসিপি রূপালি ইলিশ এখন স্বপ্নের খাবার, মধ্যবিত্তের পাতে নেই, সিন্ডিকেটেই বেহাল বাজার বিমা খাতে দৃঢ় অবস্থান, ২০২৫ সালের শুরুতেই গার্ডিয়ান লাইফের ১২৯ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি বর্তমান সময়টি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল। মাঠ প্রস্তুত এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়- বিএসইসি কমিশনার আলী আকবর ঋতুপর্ণার স্বপ্নেও আসেনি, বাংলাদেশ খেলবে এশিয়ান কাপে ড্রোন প্রতিযোগিতায় ভারত, পাকিস্তান ঠেকাতে দেশীয় প্রযুক্তিতে জোর ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আট বছর পর অতীত স্মৃতিতে মিথিলা, ব্যক্ত করলেন বিচ্ছেদের অভিজ্ঞতা চালের বাজারে অস্থিরতা, কুষ্টিয়ার খাজানগরে প্রশাসনের অভিযান ‘আম’ এখন শুধু ফল নয়, অর্থনীতির সম্ভাবনাও

সর্বশেষ আপডেট:

প্রকাশ: শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫

রূপালি ইলিশ এখন স্বপ্নের খাবার, মধ্যবিত্তের পাতে নেই, সিন্ডিকেটেই বেহাল বাজার

ইলিশ

এক সময় বাঙালির স্বাদ ও ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল ইলিশ। বর্ষায় প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়ত ভাজা বা পাতলা ঝোলের সুগন্ধ। এখন সেই ইলিশ কেবল উচ্চবিত্তের খাবার তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে। মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে বহু আগেই, আর নিম্নবিত্তের জন্য তা কেবল স্বপ্ন।

গত শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও রায়েরবাগে এক কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ২,৩০০ থেকে ২,৫০০ টাকা দরে। যা একজন দিনমজুরের প্রায় তিন দিনের মজুরির সমান। অথচ বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই। আড়তগুলোতেও মাছের জোগান ভালো। তারপরও আকাশছোঁয়া দাম।

চাঁদপুর, বরিশাল, পাথরঘাটা বা ভোলার আড়তে মাঝারি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১,৭০০ থেকে ২,০০০ টাকায়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পেছনে দায়ী প্রশাসনিক দুর্বলতা, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণে অব্যাহত অনিয়ম এবং শক্তিশালী সিন্ডিকেটের প্রভাব।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের ইলিশ আহরণ ছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৪২ হাজার টন কম। সংশ্লিষ্টদের দাবি, মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় অভিযান দুর্বল হওয়ায় এই ঘাটতি হয়েছে।

ইলিশ শাখার সহকারী পরিচালক এম ফারুক ময়েদুজ্জামান স্বীকার করেছেন, জনবল ও প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি সম্ভব হয় না, ফলে অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও মাছ ধরছে।

১১ জুন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরও বাজারে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং দাম আরও বেড়েছে।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসিন উদ্দিন জানান, ইলিশের নিলামে কারসাজি চলছে। গোপনে সিন্ডিকেট মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে।

অন্যদিকে মৎস্য ব্যবসায়ী শবে বরাতের দাবি, মাছের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। জাল, জ্বালানি, শ্রমিক—সব কিছুর খরচ বেড়েছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. আনিছুর রহমান জানান, ২০১৫ সালে এক কেজি ইলিশের দাম ছিল ৫৯০ টাকা, যা ২০২৫ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২,৫০০ টাকায়—এক দশকে বেড়েছে ৩২৪ শতাংশ। অথচ, ইলিশ চাষের মাছ নয়, সাগরে প্রাকৃতিকভাবে ধরা হয়, ফলে এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ।

সরকারি উদ্যোগ এখনো সীমাবদ্ধ কাগজে-কলমে। আড়তের সংস্কার, মূল্য নির্ধারণ বা প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারির উদ্যোগ ঘোষণার বাইরে যায়নি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, শুধু দাম নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। সমস্যা চিহ্নিত করে কাঠামোগত পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে ইলিশ হয়ে উঠবে শুধুই ছবি আর স্মৃতির বিষয়। তাঁরা উপদেশ দিয়েছেন স্যাটেলাইট, ড্রোন ও ডিজিটাল টুলসের মাধ্যমে নজরদারি, নিলামে স্বচ্ছতা এবং নদী ও সাগরে ইলিশের গতিবিধি ট্র্যাক করে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা নিতে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “ইলিশ শুধু মাছ নয়, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয়েরও অংশ। এর নাগাল যদি হারিয়ে যায়, তাহলে হারাবে এক গর্বিত ঐতিহ্য।”

যাত্রাবাড়ী বাজারে এক কেজির একটি ইলিশ দেখে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রেতা সিরাজ রহমান। চোখে হতাশা, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সন্তানের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “এই মাছ কেনার সামর্থ্য নেই, কিন্তু না কিনলে ছেলের মন ভেঙে যাবে। ইলিশ যদি শুধু স্বপ্ন হয়ে যায়, তাহলে আমাদের সংস্কৃতিই হারাবে এক উজ্জ্বল অনুষঙ্গ।”

সময় এসেছে সিন্ডিকেট ভাঙার, রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ইলিশকে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় ফিরিয়ে আনার। ইলিশ শুধু খাদ্য নয়, এটা বাঙালির আত্মপরিচয়।

আপনার মতামত দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদক ও প্রকাশক : সোয়েব মজুমদার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭২৬ ২০২৮৩১
ঠিকানা : ৯২, মতিঝিল নিউ স্টার কমিউনিকেশন (২য় তলা), মতিঝিল বা/এ ঢাকা- ১০০০

ফোনঃ +৮৮০ ১৭২৬২০২৮৩১
ই-মেইল: dainikpujibazar@gmail.com

google.com, pub-1579532791932600, DIRECT, f08c47fec0942fa0