বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ: সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

দৈনিক পুঁজিবাজার: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বিনিয়োগবান্ধব নীতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, এবং কার্যকর প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে চলমান তিন দিনব্যাপী “বে অব বেঙ্গল কনভার্সন” সংলাপের দ্বিতীয় দিনের বিনিয়োগবিষয়ক অধিবেশনে বক্তারা এ কথা বলেন।
বিনিয়োগের সম্ভাব্য খাত
বিদেশি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ, এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ইতালির ডিজেল কনসালটিংয়ের লরা লারুচ্চিয়া বলেন, “বাংলাদেশে যোগাযোগ ও প্রযুক্তির উন্নয়ন বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হতে পারে।”
বসনিয়া হার্জেগোভিনার কোয়ান্টাম গ্রোথ এজেন্সির সেলমা ওভারকেনিন বলেন, “বাংলাদেশ বিশাল ভোক্তা বাজার। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি আদর্শ জায়গা।”
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেনের মতে, “বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার পরিবর্তন দরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হবে।”
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি বিনিয়োগ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। তবে বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন করা গেলে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা
শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান কে এম মজিবুল হক বলেন, “লাল ফিতার দৌরাত্ম্য এবং দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিনিয়োগে প্রধান বাধা।”
ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম মুহাম্মদ আলমগীরের মতে, “বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে বিনিয়োগবান্ধব নীতির অভাবে এই সুযোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না।”
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজন
তুরস্কের কে আই অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাইল ইনান বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগের আগে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যবসায় স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করেন। বাংলাদেশে এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি।”
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, “প্রতিবছর ২০ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন। এটি বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের পণ্যের বাজার উন্নত দেশগুলোতে রয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।”
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও এর জন্য প্রয়োজন কার্যকর নীতি, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, এবং প্রশাসনিক সংস্কার। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারলে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।