দুর্নীতির চক্র ভাঙতে চাই ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও নতুন বন্দোবস্ত

রাজধানী প্রতিনিধি: দুর্নীতির শিকল ভাঙতে কেবল আইনের প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, দরকার ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও নতুন কাঠামো। অর্থনীতিবিদ মুশতাক খান এমন মন্তব্য করেছেন। রবিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক সংলাপের দ্বিতীয় দিনে তিনি এসব কথা বলেন।
লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজের (SOAS) অধ্যাপক এবং অ্যান্টিকরাপশন এভিডেন্স (ACE) রিসার্চ কনসোর্টিয়ামের নির্বাহী পরিচালক মুশতাক খান বলেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন রয়েছে, তবে এর বাস্তবায়ন নেই। দুর্নীতি রোধে রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব প্রকট, কারণ যারা ক্ষমতায় থাকে, তারাই এই চক্রে জড়িত।”
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ভারসাম্যের প্রয়োজন
মুশতাক খান মনে করেন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ দুর্নীতির রাশ টানতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “গুলশানের চক্রাকার বাসসেবায় যেমন যাত্রীরা নিয়ম মেনে চলেন, অন্য এলাকাগুলোতে তেমনটি দেখা যায় না। কারণ, গুলশানে যাতায়াতকারীদের একটি সচেতন অবস্থান ও সামর্থ্য রয়েছে। ভারসাম্য থাকলে দুর্নীতির সুযোগ কমে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “বড় ব্যবসায়ীরা যদি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে, তবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তৈরি হবে। দুর্নীতি তখনই কমবে, যখন সাহসী উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র তৈরি হবে।”
দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতির স্বরূপ
অনুষ্ঠানে আলোচকরা দক্ষিণ এশিয়ার দুর্নীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন। নেপালের পলিসি এন্ট্রাপ্রেনিউয়ার্স ইনকরপোরেটেডের পরিচালক অনুরাগ আচারিয়া বলেন, “নেপালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও দুর্নীতির বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে। এতে তরুণদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।”
পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি ল্যাবের নির্বাহী পরিচালক ফায়াজ ইয়াসিন ভিদাল বলেন, “দুর্নীতির একটি অংশ লোভপ্রসূত, যা বিদেশে অর্থ পাচারের মাধ্যমে সম্পদ গঠনে ব্যবহৃত হয়। দুবাইয়ের এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ পাকিস্তানি সরকারি কর্মকর্তাদের।”
দুর্নীতি রোধে নতুন চিন্তার প্রয়োজন
মুশতাক খান মনে করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক ও রাজনৈতিক সাহস দেখানো জরুরি। তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের সময় যেভাবে মানুষ ভয় ভেঙেছে, দুর্নীতির চক্র ভাঙতেও একই সাহস দরকার।”
বিশ্বজুড়ে চিন্তাশীল অংশগ্রহণ
তিন দিনব্যাপী সংলাপে বিশ্বের ৮০টি দেশের রাজনীতিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন। মূল আলোচনার বিষয়গুলো ছিল ভূরাজনীতি, মানবাধিকার, দুর্নীতি, অপতথ্য এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য।
এই সংলাপ থেকে উঠে আসা আলোচনার ফলাফল দুর্নীতির চক্র ভাঙতে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।