ইরানের প্রতিক্রিয়া সামাল দিতে আগাম প্রস্তুতি নেয় যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ছিল মধ্যস্থতাকারী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মাঝে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার আগেই কাতারে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ‘আল-উদেইদ’ থেকে বিমান ও ভারী সরঞ্জাম সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এগুলো স্থানান্তর করা হয় সৌদি আরবের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে।
‘মিডল ইস্ট আই’-এর এক প্রতিবেদনে কাতারের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়, এই পদক্ষেপ থেকে পরিষ্কারভাবে ধারণা করা যায়, ইরান সৌদি আরবে হামলা চালাবে না—এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত ছিল। এতে বোঝা যায়, হামলার আগে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে একটি পরোক্ষ সমন্বয় হয়েছিল, যার মাধ্যমে কাতার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রবিবার কাতারের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়। এতে হামলার সময়সূচি, অবস্থান এবং পরিসর নিয়ে একধরনের বোঝাপড়া গড়ে ওঠে। এই সমন্বয় ইঙ্গিত দেয়, ইরান সরাসরি সংঘাতে না গিয়ে নিয়ন্ত্রিত বার্তা দিতে চেয়েছে।
বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব পড়ে। হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম হঠাৎ করে কমে যায়। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫.৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ে নেমে আসে ব্যারেলপ্রতি ৭১.১১ ডলারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাজার এই হামলাকে উত্তেজনা প্রশমনের কৌশল হিসেবেই গ্রহণ করেছে।
মার্কিন ও আরব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আল-উদেইদ ঘাঁটি থেকে গত সপ্তাহে বিমান এবং সরঞ্জাম অপসারণ শুরু হয়। ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র জানত ইরান কোন কোন স্থানে হামলা চালাতে পারে।
উল্লেখ্য, কাতারের এই ঘাঁটিতে প্রায় ১০ হাজার মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। এটি মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের (সেন্টকম) আঞ্চলিক সদরদপ্তর হিসেবেও কাজ করে।
হামলার কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, ইরান আগাম সতর্কবার্তা দিয়েছিল, যার ফলে প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তিনি এটিকে উত্তেজনা হ্রাসের সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। একইসঙ্গে ইসরায়েলকে সংযত থাকার আহ্বান জানান।
ট্রাম্প বলেন, “তারা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং আশা করছি, এখানেই বিষয়টি শেষ হবে। আমি ইরানকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ আগাম বার্তার মাধ্যমে কোনো প্রাণহানি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এখন ইরান এগোতে পারে এবং আমি ইসরায়েলকেও একইভাবে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করছি।”
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান আল-উদেইদকে লক্ষ্য করাকে একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেই নিয়েছে, যাতে উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া সীমিত রাখা যায়। কাতার ও ইরান যৌথভাবে বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’ ব্যবহার করে, এবং দোহা ঐতিহাসিকভাবে তেহরানের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের ভৌগলিক অবস্থান ও আকারের কারণে সেখানে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালানো কৌশলগতভাবে কঠিন। ইরান ও সৌদি আরব ইতোমধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়নের পথে রয়েছে।
এই বাস্তবতায় ইরানের টার্গেট নির্বাচন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত এড়ানোর প্রচেষ্টারই প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।