রাজধানীর হলি আইডিয়াল স্কুলে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন

মোঃ হাফিজুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার
রাজধানীর উত্তর শাহজাহানপুরে অবস্থিত হলি আইডিয়াল স্কুল ও হলি প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসার আয়োজনে উদযাপিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতিবছর ৫ অক্টোবর এই দিনটাকে পালন করা হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশের ৩০ মিলিয়ন শিক্ষক ও ৫০০টি সংগঠন শিক্ষকদের সম্মানার্থে এই দিবসটি উদযাপন করছে। এইদিন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিবসে এই দিনটি উদযাপন করা হলেও ৫ অক্টোবর মূলত ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে Education International প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে থাকে-যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশায় অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য হলো ‘শিক্ষকতাকে একটি সহযোগী পেশা হিসেবে পুনর্গঠন’—যা শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সহযোগিতার রূপান্তরমূলক সম্ভাবনা তুলে ধরে। এ দিবসের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রতিবছর ইউনেস্কো ঘোষিত প্রতিপাদ্য অনুযায়ী বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন করা। জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা ও অবদান সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া ও গুণী শিক্ষক সম্মাননা প্রদানের মাধ্যমে সকল শিক্ষককে সম্মানিত করা।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে হলি আইডিয়াল স্কুলের সাবেক শিক্ষকসহ শিক্ষকমন্ডলী শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবস, সফল হোক, সফল হোক, বিশ্ব শিক্ষক সমাজকে হলি আইডিয়াল স্কুলের পক্ষ থেকে লাল গোলাপ শুভেচ্ছা স্লোগানে শাজাহানপুরের মূলসড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের এ্যাড: ডিআইজি জনাব নাবিলা রীনা, চেয়ারম্যান, হলি আইডিয়াল স্কুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা শিক্ষা অধিদপ্তরের লালমনিরহাট জেলা পিটিআই ইন্সট্রাক্টর জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান। শোভাযাত্রা শেষে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সম্মাননা, শিক্ষক মূল্যায়ন, কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করা হয়। প্রধান অতিথির জনাব নাবিলা জাফরিন রীনা বলেন, যে যাই বলুক, শিক্ষকতা পেশা আজও একটি মহান পেশা হিসেবে স্বীকৃত। কর্মক্ষেত্রে ভিন্ন পেশায় জড়িত থাকলেও আমি শিক্ষকদেরই আদর্শ শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছি। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সে কারণেই বলেছেন, ”যারা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের চেয়েও অধিক সন্মানীয়। পিতামাতা আমাদের জন্ম দেয় ঠিকই, শিক্ষকরা জন্মকে সার্থক করে তোলেন।”
বিশেষ অতিথি বক্তব্যে জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা প্রত্যেকেই শিক্ষক, আমরা জাতি গঠনের মহান কারিগর। এ মহাবিশ্বে যত আদর্শিক মানুষ রয়েছে, তারা কোন না কোন শিক্ষকের ছত্রছায়ায় গঠিত। শিক্ষকদের দায়িত্ব-কর্তব্য, মর্যাদা ও সমাজ গঠনে শিক্ষকদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা করেন জনাব সাবেকুন নাহার সুমা, জনাব সাইমন মুক্তা, জনাব নুসরাত বেগম শিল্পী, জনাব শারমিন আক্তার, জনাব শারমিন আক্তার মারিয়া, জনাব আব্দুল কাইয়ুম খান, জনাব লিমা হক ও জনাব মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে জনাব মোঃ হাফিজুর রহমান প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের করুন অবস্থা তুলে ধরে বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে নামমাত্র বেতনে শিক্ষকদের টিকে থাকা যেন এক কঠিন সংগ্রাম। প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত। সরকারি সকল নিয়ম-নীতির অনুসরণ করলেও শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির উপর নির্ভরশীল এ প্রতিষ্ঠানগুলো। বাড়িভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ যাবতীয় খরচ সামলিয়ে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মানি দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য । যথাযথ সম্মানী দিতে না পারায় শিক্ষক মনে পেশাগত বিকাশে বাধার সৃষ্টি করছে। জাতি গঠনের এই মহান পেশায় নিয়োজিত শিক্ষকমন্ডলী আজও চিরবঞ্চিত, অবহেলিত। তাই বিশ্বায়নের এ যুগে বলতে হয়- “ক্ষুধার্ত শিক্ষক দিয়ে তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীর প্রয়োজন মেটানো প্রায়ই অসম্ভব”।
দেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির মহাবিপ্লবের কথা শোনা গেলেও সরকারি উদ্যোগে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার ছোঁয়া লাগেনি আজও। বলা যায়, বিগত কোনো সরকার প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সুনজর দেয়নি।
একুশ শতকের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে বর্তমান সরকারের কাছে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বিশেষভাবে প্রত্যাশা- প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির মাধ্যমে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের আওতায় আনতে হবে। নচেৎ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কাঙ্ক্ষিত জাতি গঠনে পিছিয়ে পড়বে প্রিয় মাতৃভূমি আমাদের এই বাংলাদেশ।
বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা প্রধানের লক্ষ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে হলি আইডিয়াল ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ফিতা কেটে ফাউন্ডেশনের শুভ উদ্বোধন করেন পিটিআই ইন্সট্রাক্টর জনাব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকের প্রতি হৃদয়ের গভীর থেকে ভালবাসা, সম্মান, বিনম্র শ্রদ্ধা ও সুস্বাস্থ্য কামনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়।