ব্যাংক খাতে লুট ১৫টি ব্যাংক

বাংলাদেশে কার্যত দুইটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করেছে—একটি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আরেকটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত। ওই কার্যালয় থেকেই ১২-১৪টি ব্যাংকের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ কারণে ব্যাংক খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের মোট ১৫টি ব্যাংক লুট হয়েছে, যার মধ্যে ৭টি সরাসরি এবং বাকিগুলো পরোক্ষভাবে লুট হয়েছে।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘ব্যাংক খাতের সংকট, সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক আলোচনায় এসব মন্তব্য করেন বক্তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় (ইউএপি) ও জার্মানির ওটিএইচ অ্যামবার্গ-ওয়েইডেনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মাহমুদ ওসমান ইমাম। তিনি বলেন, দেশে ভালো ব্যাংক যেমন আছে, তেমনি কিছু ‘জম্বি ব্যাংকও’ রয়েছে, যেগুলো কার্যত দেউলিয়া। খেলাপি ঋণ কিছু ব্যাংকে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত স্বাধীনতা দিতে হবে। একই সঙ্গে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিবারের সর্বোচ্চ দুজনকে পরিচালনা পর্ষদে রাখার বিধান, পরিচালকদের মেয়াদ কমিয়ে ৬ বছর করা এবং চেয়ারম্যান-নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে মালিকপক্ষের বাইরে কাউকে নিয়োগের প্রস্তাব দেন তিনি।
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, ব্যাংক খাতে মোট ঋণ ১৮ লাখ কোটি টাকা, এর মধ্যে ৪ লাখ কোটি টাকা মন্দ ঋণ এবং ৭ লাখ কোটি টাকা সমস্যাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দেশের মোট ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে প্রায় ১৫টি ব্যাংক লুট হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে ৫টি ‘জম্বি ব্যাংক’ একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এক এস আলম গোষ্ঠী বেনামে পুরো ব্যাংক খাত ধ্বংস করেছে।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ কোটি টাকায়, যা ২০২৫ সালের জুন নাগাদ আরও দেড় লাখ কোটি টাকা বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে, আমানতকারীরা সময়মতো টাকা তুলতে পারছেন না।
ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসেন বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ, হুইসেলব্লোয়িং নীতি শক্তিশালী করা এবং সর্বোপরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া এই খাতে স্থায়ী সংস্কার সম্ভব নয়।