পুঁজিবাজারের অস্থিরতা: বিনিয়োগকারীরা নতুন বছরে আশাবাদী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা গত আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে কিছুটা চাঙা ভাব তৈরি হয়েছিল, তবে এই উল্লাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। দ্রুতই বাজার উল্টো পথে চলতে শুরু করে। ২৮ অক্টোবর, ২০২৪-এ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪,৮৯৮ পয়েন্টে নেমে আসে, যা ছিল গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারদামের পতন ও পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
পুঁজিবাজারে অবিশ্বাসের কারণ
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে নামেমাত্র প্রতারণা, প্লেসমেন্ট-বাণিজ্য এবং শেয়ার কারসাজি অনেক বিনিয়োগকারীকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ কোটি টাকা জনগণের কাছ থেকে আত্মসাৎ হয়েছে। এর পর বিএসইসির (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনা হয়। শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম কমিশন বিদায় নেন, এবং তার স্থানে নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে, বাজারে আস্থা ফিরে আসেনি এবং বিনিয়োগকারীরা হতাশ। তারা ‘লংমার্চ’ এবং বিএসইসি-এর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন।
শ্বেতপত্রের প্রতিবেদন
সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত কয়েক বছরে পুঁজিবাজারে ২০৫ প্রভাবশালী উদ্যোক্তা গোষ্ঠী, ইস্যু ম্যানেজার, নিরীক্ষক এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি কারসাজির নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল। সেই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাজারের অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, গত বছর বাজারের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণী এবং দেউলিয়া হয়ে গেছে।
বাজারের মূলধন এবং সূচকের পতন
২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি ডিএসই-এর প্রধান সূচক ছিল ৬,২৩৩ পয়েন্ট। কিন্তু, ডিসেম্বরের ২৬ তারিখে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫,১৮৪ পয়েন্টে। একই সময়, ডিএসই-এর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ, এক বছরে বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন কমিশনের পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ আশা
নতুন কমিশন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং কারসাজির অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে পুঁজিবাজারে আইপিও এবং বন্ড মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তবে এই উদ্যোগ যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা ২০২৫ সালে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন আশা করছেন।
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় টাস্কফোর্স
পুঁজিবাজার উন্নয়নে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী, টাস্কফোর্স দীর্ঘমেয়াদী পুঁজিবাজারে অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন করবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আলোচিত ব্যক্তিত্ব
পুঁজিবাজারে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে রয়েছে সালমান এফ রহমান, সাকিব আল হাসান, এবং আবুল খায়ের হিরু। এছাড়া, ১২টি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির কারণে ৭২২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, নতুন বছর ২০২৫-এ পুঁজিবাজারের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি করবে।