✍️ স্বপ্নীল হাসান | নিউইয়র্ক প্রতিনিধি
নিউইয়র্কে ইতিহাস গড়লেন মুসলিম তরুণ নেতা জোহরান মামদানি! ৪ নভেম্বরের নির্বাচনে তাকেই দেখা যেতে পারে বিশ্বের রাজধানীর মেয়র হিসেবে।
নিউইয়র্ক সিটির চারশ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন এক দিগন্ত উন্মোচিত হলো। ২০২৫ সালের মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী মুসলিম রাজনীতিক জোহরান মামদানি। ২৪ জুন (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত প্রাইমারি নির্বাচনে তিনি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এই ঐতিহাসিক অর্জন করেন।
ভোট গ্রহণের দিন নিউইয়র্ক শহরে তাপমাত্রা ছিল ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট—গত ১৩ বছরে সর্বোচ্চ। তবুও, তীব্র গরম উপেক্ষা করে প্রবাসীসহ সাধারণ ভোটারদের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল দৃশ্যমান। নিউইয়র্ক বোর্ড অব ইলেকশনের তথ্য অনুযায়ী, মেয়র পদে জোহরান মামদানি পেয়েছেন ৪,০৮,৬১৭ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ক্যুমো পেয়েছেন ৩,৩৯,৪৪১ ভোট এবং তৃতীয় স্থান অর্জন করেছেন ব্র্যাড লেন্ডার, যার প্রাপ্ত ভোট ১,০৭,৩০২।
নিউইয়র্ক শহরের ৭০ শতাংশ ভোটার ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রেজিস্টার্ড সমর্থক। তাই দলের প্রার্থী হওয়াই অনেকটা মূল নির্বাচনে জয়ের পথ পরিষ্কার করে দেয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রাথমিক নির্বাচনে জোহরানের বিজয়ই মূল নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফলকে ইঙ্গিত করে।
জোহরান মামদানি ২০২২ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্টেট পার্লামেন্টে প্রথম মুসলিম হিসেবে প্রবেশের গৌরব অর্জন করেন। তখনই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে মার্কিন মিডিয়ায় আলোচিত হন। এবার নিউইয়র্ক শহরের প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে যাওয়ার পথে তার অগ্রগতি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই প্রাইমারিতে ৩৯তম ডিস্ট্রিক্ট থেকে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ। তার পাশাপাশি জোহরানের বিজয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি এবং মুসলিম কমিউনিটিতে বইছে বিজয়ের উচ্ছ্বাস। ব্রুকলিন, জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, পার্কচেস্টারসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসীরা বিজয় উৎসবে মেতে উঠেছেন।
আগামী ৪ নভেম্বর মূল নির্বাচনে জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন বর্তমান মেয়র এরিক এডামস, যিনি এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। একাধিক দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় এবং ট্রাম্পের প্রকাশ্য সমর্থন নেওয়ার কারণে তিনি ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন হারিয়েছেন। অপরদিকে, রিপাবলিকান পার্টিও একজন প্রার্থী দিয়েছে, তবে ভোটের হিসাব অনুসারে তিনিও পিছিয়ে আছেন।
নিউইয়র্ক সিটিতে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। তাদের ৯০ শতাংশ যদি ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হন, তবে জোহরানের জয়ে কোনো বাধা থাকবে না বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
বিজয়ের পর জোহরান মামদানি বলেন, “আমি নিউইয়র্কের প্রতিটি মানুষের মেয়র হতে চাই—আপনি যাকেই ভোট দেন না কেন, আমি সবার জন্য কাজ করব।”
বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এই জয়কে শুধু রাজনৈতিক নয়, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক বিজয় হিসেবেও দেখছেন। তাদের প্রত্যাশা, নিউইয়র্ক সিটির প্রশাসনে এবার অভিবাসী এবং মুসলিম কমিউনিটির জন্য নতুন ও কার্যকর পদক্ষেপ আসবে।
📌 সংক্ষিপ্ত তথ্যবলি:
www.dainikpujibazar.com
কপিরাইট © দৈনিক পুঁজিবাজার ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত