সাধারণ মানুষ ইন্স্যুরেন্স করে মূলত সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিপদের সময় আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে। এটি ব্যক্তি, পরিবার বা ব্যবসাকে আকস্মিক দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, মৃত্যু কিংবা সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির সময় আর্থিক সুরক্ষা দেয়। সেই সঙ্গে ইন্স্যুরেন্সের একটি বাড়তি সুবিধা হলো—এটি আয়করমুক্ত।
বিমাগ্রহীতারা বছরের পর বছর কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে নিয়মিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন এবং পলিসির মেয়াদ শেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনের মাধ্যমে তাদের দাবি করা অর্থ পান। তবে, সবক্ষেত্রে এমনটি হয় না—বিভিন্ন কারণে অনেক সময় বিমা দাবি বাতিল হয়, যা গ্রাহকের জন্য বড় ধরনের মানসিক ও আর্থিক ধাক্কা হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষ করে, গুরুতর অসুস্থতা বা আর্থিক সংকটের সময় বিমা দাবি পরিশোধ না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। যদিও অনেকের ধারণা, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো দাবি পরিশোধ করতে চায় না, তবুও বাস্তবে দেখা যায় কিছু কোম্পানি নিয়মিত দাবি নিষ্পত্তি করছে। এর মধ্যে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড দাবি নিষ্পত্তিতে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান।
১. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চিকিৎসা ব্যয়ের রশিদ না দেওয়া
দাবি করার সময় সঠিক কাগজপত্র জমা দেওয়া জরুরি। অনেক সময় গ্রাহক হাসপাতালের বিল বা চিকিৎসা খরচের রসিদ সংরক্ষণ করেন না বা অসম্পূর্ণ রাখেন, ফলে কোম্পানি যাচাই করতে না পেরে দাবি বাতিল করে।
২. পূর্বের অসুস্থতা গোপন করা
পলিসি নেওয়ার আগে থাকা অসুস্থতা গোপন করলে পরবর্তী সময়ে সেই কারণে করা দাবি গ্রহণযোগ্য হয় না। যেমন, হার্টের সমস্যা গোপন করে ইন্স্যুরেন্স নেওয়া হলে পরে হার্ট অ্যাটাকের দাবি বাতিল হতে পারে।
৩. জাল কাগজপত্র বা মিথ্যা তথ্য প্রদান
হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও ভর্তি খরচ দেখানো বা অতিরঞ্জিত চিকিৎসা ব্যয়ের কাগজ জমা দিলে কোম্পানি তদন্তে অসঙ্গতি পেলে দাবি বাতিল করে দেয়।
৪. বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা
লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো, আত্মহত্যা বা অপরাধে জড়িয়ে মৃত্যু হলে সেই দাবিগুলো গ্রহণ করা হয় না।
৫. নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম করে দাবি করা
পলিসির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি জমা দিতে হয় (যেমন ৩০ বা ৬০ দিনের মধ্যে)। দেরিতে আবেদন করলে দাবি বাতিল হয়ে যায়।
৬. চুক্তির আওতার বাইরে থাকা দাবি
সব ধরনের ক্ষতি বিমা কভার করে না। পলিসিতে কোন দুর্ঘটনা কাভার হবে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। আওতার বাইরে থাকা ঘটনায় করা দাবি বাতিল হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েকটি পদক্ষেপ মেনে চললে বিমা দাবি বাতিলের ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব—
পরিশেষে, বিমা দাবি প্রত্যাখ্যানের ঘটনা গ্রাহকের আস্থা কমিয়ে দেয় এবং খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। অথচ সামান্য সচেতনতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো সহজেই এড়ানো সম্ভব।
গ্রাহকের দায়িত্ব সঠিক তথ্য ও নথিপত্র দেওয়া এবং কোম্পানির দায়িত্ব হলো গ্রাহককে নিয়ম ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া।
দুই পক্ষই যদি দায়িত্বশীল হয়, তবে দেশের ইন্স্যুরেন্স খাত আরও বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর হয়ে উঠবে।
www.dainikpujibazar.com
কপিরাইট © দৈনিক পুঁজিবাজার ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত