দৈনিক পুঁজিবাজার। খুলনা প্রতিনিধি:
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কারণে টানা প্রায় দুই মাস ধরে পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন স্থানীয়রা। ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, মাছের ঘের, সবজিক্ষেত, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সবকিছু পানির নিচে। শুকনো জায়গার দেখা নেই, চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা। রান্না, ঘুম বা স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সবকিছুই ব্যাহত হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষদের অভিযোগ—“নিজেদের এখন জলজ প্রাণী মনে হচ্ছে।”
ডুমুরিয়ার বারানসি গ্রামের চন্দ্রকান্ত মণ্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দুই মাস ধরে পানিবন্দি, চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটছে। রাস্তায় হাঁটু পানি, উঠোনে কোমর পানি। রান্নার জায়গা নেই, কাঠ নেই, একবার রান্না করলে দুই দিন খেতে হচ্ছে। প্রাকৃতিক কাজও করতে হচ্ছে নৌকায় চড়ে বিলের মধ্যে।”
সাজিয়াড়া আবাসনের হালিমা বেগম জানান, ৫৮টি ঘরের সবই পানির নিচে। মাচা করে থাকতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। তিনি বলেন, “খাবারের চেয়ে থাকার জায়গা আমাদের বড় প্রয়োজন। ঘরে কোমর পানি, পচা পানির দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে গেছে।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, জলাবদ্ধতায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমির সবজি ডুবে গেছে। করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, শশা, সিমসহ প্রায় ৯ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সোহেল মো. জিল্লুর রহমান রিগান জানান, বন্যায় প্রায় ৩ হাজার ৫০০ মাছের ঘের ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ করা হলেও স্থানীয়দের দাবি—তারা ত্রাণ নয়, দ্রুত পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী সমাধান চান।
স্থানীয় চেয়ারম্যানরা জানান, ভদ্রা নদী পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় শৈলমারী গেট দিয়ে পানি বের হতে পারছে না। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি সাব-মার্সিবল পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে, তবে আশানুরূপ ফল মিলছে না। ক্রমাগত বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিএডিসি ও উপজেলা প্রশাসন একযোগে কাজ করছে। খালগুলো উন্মুক্ত করা হচ্ছে, কালিঘাট স্লুইস গেটের কপাট খুলে দেওয়া হয়েছে এবং ময়ুর নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে।
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগীয় প্রধান প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, শৈলমারী গেট থেকে আপার সালতা পর্যন্ত পলি অপসারণের কাজ চলছে। দুটি ভাসমান ভেকু ও দুটি লংবুম ভেকু দিয়ে খননকাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ৫০ কোটি টাকার নদী ড্রেজিং প্রকল্প, ২৬টি খাল পুনঃখনন এবং পাঁচটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপনের প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি। মুজারঘুটা, বারানসি, সাড়াভিটা, বটবেড়া, কৃষ্ণনগর, কোমরাইল, চেচুড়ি, টোলনা, গজেন্দ্রপুর, শান্তিনগর, বিলসিংগা, রানাই, ঘোষড়া, আটলিয়া, গুটুদিয়া, সাজিয়াড়া ও আরাজি ডুমুরিয়া—এসব গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
www.dainikpujibazar.com
কপিরাইট © দৈনিক পুঁজিবাজার ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত