দেশে আর্থিক জালিয়াতি প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। তিনি বলেছেন, জালিয়াতি ও লুটের ঘটনায় দায়ীদের কয়েকগুণ জরিমানা করতে হবে এবং লুট করা অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)সহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মাল্টিপারপাস হলে ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ-২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিএসইসি।
বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনারবৃন্দ, কর্মকর্তা, পুঁজিবাজার অংশীজন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩’ ও ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’—এই দুটি আইন একত্রিত করে একটি যুগোপযোগী আইন করা উচিত। একইসাথে সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত সব রুলস সহজবোধ্য করে এক জায়গায় আনলে আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতা কমবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসইসি কমিশনার মো. আলী আকবর। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জিসান হায়দার ও আর্থিক খাত বিশেষজ্ঞ ইয়াওয়ার সাইদ। প্রেজেন্টেশনে জালিয়াতির ধরন, শনাক্তকরণ ও প্রতিরোধের কৌশল, নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা এবং বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রিপন কুমার দেবনাথ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং ব্যারিস্টার কারিশমা জাহান। সঞ্চালনা করেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন চৌধুরী। আলোচনায় প্রতারণা প্রতিরোধ, ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা এবং বিনিয়োগকারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয় গুরুত্ব পায়।
সভাপতির বক্তব্যে বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, কমিশন ইতোমধ্যে ‘সিকিউরিটিজ আইন’ একীভূত করার কাজ শুরু করেছে এবং সব রুলস এক জায়গায় আনার উদ্যোগ চলছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিশন অনিয়ম ও জালিয়াতি তদন্তে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে সাতটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ট্রাস্টি, কাস্টোডিয়ান ও সম্পদ ব্যবস্থাপকদের ভূমিকা সুসংহত করা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে সুশাসন নিশ্চিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের জবাবদিহিতা বাড়ানো হচ্ছে।
খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেন, “প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ রোধে সব ব্রোকারকে সমন্বিত ব্যাক অফিস সফটওয়্যারের আওতায় আনা হয়েছে।” তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে টেকসই উন্নয়ন ও সংস্কার বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
বিএসইসি চেয়ারম্যান মনে করেন, দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুঁজিবাজারে সম্পৃক্ত করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রতারণামুক্ত, আধুনিক ও সুরক্ষিত বিনিয়োগ পরিবেশ গড়ে তোলার ওপর তিনি জোর দেন। একইসাথে সর্বস্তরে বিনিয়োগ শিক্ষা সম্প্রসারণের আহ্বান জানান তিনি।
www.dainikpujibazar.com
কপিরাইট © দৈনিক পুঁজিবাজার ২০২৪ সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত